"এক আকাশে শত তারা",
বলছে পথিক, দিশেহারা,
"কোথায় চললে, ও ছায়াপথ?
বাঁধো ও তোমার উজ্জ্বল রথ।
নিয়ে চলো দেখি তোমার সাথে ,
দেখবো কি আছে আকাশটা তে!"
"ঐ যে, ও যে সপ্তঋষি, আকাশের ওই পারে।",
পথিক বলে, "হে মুনিবর, জগৎসংসারে
ছিলে বলো দেখি কবে তোমরা? কত বৎসর আগে?"
শোনে পথিক আকাশে তার প্রতিউত্তর জাগে!
ক্রুত মুনি হেসে বলে তারে, "তখন সবে ভোর!
না ছিল যখন পাপের ছায়া, না লালসার ঘোর,
সত্য যখন লক্ষ্য এবং সন্ধান সুধু তার
দুহাত ভরে সাজিয়েছে যে এ জগৎসংসার।"
অবাক পথিক জিজ্ঞাসা করে, "খুঁজে পেয়েছিলে তাকে?"
পুলস্থ মুনি বলে হেসে, "সে কি চোখের সামনে থাকে?"
"নিরাকার সে, দেয় না ধরা।", বললে অত্রি মুনি।
পথিক বলে, "ধরনি, দেখনি, পাবে কি করে শুনি?"
কপাল ছুঁয়ে পুলহ মুনি বলে চক্ষুটি বুঁজে,
"তোমারই মধ্যে আছে সে, পথিক, দেখো একবার খুঁজে।"
অবাক পথিক গাঁ হাতড়ায়, "কোথায় সে? কোন অঙ্গে?"
মরিচি মুনি বলে, "পথিক, জড়বস্তুর সঙ্গে
বিধাতার কি থাকে কোনো মিল, নিরাকার যার রূপ?
সুন্দর সে, স্নিগ্ধ- শান্ত আলোর এক স্তূপ।"
হঠাৎ পথিক ফিরে তাকালে, "ওই যে কারা কাঁদে,
এত দিন তাঁরে বেধেছিল যারা মোহ অর আহ্লাদে।
কত শত লোক বুক চাপড়ায়, চোখের জলে ভাসে!
এত সব দেখে পথিকের মন বিষন্ন হয়ে আসে।
জিজ্ঞাসে সে, "হে মুনিবর, কেনো কাঁদে? ওরা কারা?"
"তোমার পুন্ন-রথ ধরিয়া পথে নামিয়েছে যারা",
বশিষ্ঠ মুনি আরও বলে, "ওরা সেই পথেরই যাত্রী
যে পথ দেখিয়ে চিরতরে চোখ বুঁজেছিলে সেই রাত্রি।
যে পথ ধরে তুমি, হে পথিক, চলিয়াছো পরলোক,
সে পথে চলিবে শিষ্যেরা তোমার, ভুলিবে দুঃখ- শোক।"
"এ পথ থামে কোথায় গিয়ে?", বললে পথিক ফিরে।
"পূজেছে মানুষ আজীবন জারে মন্দিরে মন্দিরে!"
বলে চলে আরও অঙ্গীরা মুনি, "দাও হে এবার পাড়ি,
মানুষ রূপে ছিল যা যা, সব সে বিকার ছাড়ি।"
পথিক দেখে সামনে তার পথ এক দীপ্তিময়,
শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে যে এক আলোর বলয়।
তার দিকে চলে পথিক এবার, দেখেনা আর ফিরে
মৃত্যু নদীর অপর পাড়ে মর্তলোকের তীরে।